প্রকাশিত: Mon, Jun 3, 2024 3:02 PM
আপডেট: Tue, Apr 29, 2025 11:53 PM

অপশাসন ও দুর্নীতি যে ক্রোধের জন্ম দিচ্ছে

আজিজুর রহমান আসাদ

মানুষ খাওয়ার আশা করে ঝলসানো মাংস, দ্রাক্ষা রস ও সুস্বাদু ফল, কিন্তু তা সবাই সহজে পায় না। মানুষ আশা করে ‘দয়ালু, সর্বজ্ঞানীর শাসন’, কিন্তু দাসমালিকরা সে রকম ছিল না, ছিল নৃশংস শাসক। মানুষ আশা করে রোগ শোক মুক্ত সুখী জীবন, সেই জীবন যদি মৃত্যুহীন হয়, তাহলে এর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে? আব্রাহামিক ধর্ম, হাজার তিনেক বছর আগে থেকেই, মানুষের ইহলৌকিক আকাক্সক্ষার একটি পারলৌকিক স্বপ্ন সমাধান দিয়েছে, ধর্মের জন্ম দিয়ে। যেখানে স্বর্গ বা বেহেশত আছে। বেহেশতের যে অনন্ত জীবন, ভোগের জন্য যাবতীয় খাবারের সাথে দ্রাক্ষা রস এবং বহু নারী সম্ভোগ, এই ব্যুফে ও হেরেম - মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বেদুইন পুরুষের ফ্যান্টাসি। তবে অন্য অঞ্চলেও এই পারলৌকিক স্বপ্ন আছে। পারলৌকিক স্বপ্ন থাকবে, যতদিন বঞ্চনা ও অপ্রাপ্তির বেদনা থাকবে, বাস্তবে।  

বাস্তবজীবনে আমরা যা পাই না, তা আমরা স্বপ্নে, কল্পনায় বা পরকালে পেতে চাই। তবে আজকাল যেহেতু নতুন ধর্ম তৈরির ঝামেলা বেশি, সে কারণে বাস্তব জীবনে আমরা যা পাইনা, তা সিনেমায় দেখাতে ও দেখতে চাই। যে কারণে, নতুন ধর্মের বদলে নতুন নতুন সিনেমা পাচ্ছি। সিনেমা হিট হয় যেখানে বড়লোকের জীবন ও সেক্স, সাথে ভায়লেন্স থাকে। এই ভায়লেন্স হবে, প্রধানত দুর্নীতিবাজ আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের উপর চরম সহিংসতা। সিনেমা দেখে আমাদের ফুঁসে ওঠা ক্রোধ ও বঞ্চনার বেদনার উপশম হবে। ইদানীং যেমনটা দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায় দেখা যায়। 

ঢাকার সাথে কক্সবাজার রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার সংবাদে, আমার একটি রাজনৈতিক থ্রিলার সিনেমা বানানোর চিন্তা মাথায় ঘুরছে। স্টোরি লাইনটা এরকম; প্রোটাগনিস্ট একজন কিশোর গ্যাং লিডার, আর ভিলেন একটি চক্র, বাসমালিক সমিতির দুই  নেতা ও রেলওয়ে বিভাগের এক আমলা। এই কিশোর গ্যাং লিডার এক আইসিটি হ্যাকার কে দিয়ে, রেলওয়ে বন্ধ করে দেয়ার পুরো চক্রান্ত উদঘাটন করে এবং দুর্নীতিবাজদের ব্যক্তি জীবনের যৌন কেলেঙ্কারি সহ যাবতীয় অপকর্ম সংগ্রহ করে। এরপর শুধু মাইর আর মাইর। এই মাইর কেটে কুচি কুচি করার মত কুৎসিত সহিংসতা নয়, মাইর হচ্ছে খুব শিল্পিত উপায়ে। (টারানটিনোর ‘কিল বিল’ স্মরণীয়) এবং এক দুর্নীতিবাজ আমলার মেয়ের সাথে এই কিশোর গ্যাং লিডারের পরিচয় হয়, ফলে মাইরের মাঝ খানে প্রেমের একটি স্বপ্নদৃশ্য আছে, যা বাস্তবে সম্ভব হয় না। স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে, চোখের জলে ভালোবাসার বিদায়। 

১৬ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম, এরপর শ্রেণিশত্রু খতমের রাজনীতিতে আস্থা ছিল অনেকদিন। বাস্তবতা বদলেছে, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বেড়েছে, জানি যে ব্যক্তি-শ্রেণিশত্রু খতম করে দিলেই বা রেজিম-চেঞ্জ হয়ে গেলেই এই শোষণ ও দুর্নীতির ব্যবস্থা বদলাবে না, যতদিন না বিপ্লবী রাজনীতি দিয়ে এই ব্যবস্থাকে বদলে দেয়া যায়। কিন্তু এই অপশাসন ও দুর্নীতি যে ক্রোধের জন্ম দিচ্ছে, শ্রেণিশত্রু খতমের যে তীব্র ইচ্ছের জন্ম দিচ্ছে, সেটাকে শান্তিপূর্ণ পথে প্রকাশের জন্য সিনেমা বানিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার চেষ্টা করাই এখন এই বয়সে একমাত্র অপশন মনে হচ্ছে। লেখক: গবেষক